সুবলের ঘুম আসে না - দ্বৈপায়ন মজুমদার


এমনিতে সুবল ভালই থাকে । বিশেষ কোন কাজকম্ম নেই, আয় নেই, খরচও তেমন নেই । একটা বাপ ঠাকুরদার পুরনো বাড়ি, নিচে তিনটে দোকান ভাড়া দেওয়া, তাও সেই কত বছর । ওই দোকানের ভাড়া, আর বাবার রাখা কিছু ফিক্সড ডিপোজিট, দিব্যি কেটে যায় সুবলের । তিন কুলে কেউ নেই, বিয়ে করা বউটা সুবলকে ছেড়ে কত বছর চলে গেছে মনেই পড়ে না । দুবেলা সামান্য ভাত ডাল ফুটিয়ে নেয়, তাও রাতের বেলা অনেক দিন খাওয়াই হয় না । এক বোতল বাংলা কিনে আনে, একাই শেষ করে ফেলে । তারপর খেতে ইচ্ছে হলে খায় না হয় ফেলে দেয় । গলির বাদামি রঙের কুত্তাটা তখন চেটে পুটে খায় ওর রান্না । বাংলা গিলে সেই যে ঘুমায় তারপর যখন চোখ খোলে তখন ফ্যাকাসে দেওয়াল ঘড়ি জানায় বেলা দশটা । 

কিন্তু ইদানিং খুব সমস্যা হচ্ছে, কারণ ওই বাদামি কুত্তা । শালা রাতের বেলা খেতে না পেলেই এমন চিৎকার জুড়ছে যে ঘুমের বারোটা । আর একবার ঘুম না এলে খুব কান্না পায় সুবলের, খুব নিজের ছোটবেলা, ভরাট সংসার মনে পড়ে । কান্না সুবল দুচোখে দেখতে পারে না । কুত্তাটা বেশ ক'বছর ওদের গলিতে, কেমন একটা মায়া ছিল, কিন্তু এখন দু চোখে দেখতে পারছে না ওটাকে । 

তাই ভাল করে ইঁদুরের বিষটা ডালে মেশালো । কেনার সময় ছোকরাটা বলেছিল খুব তেজী বিষ দাদা, বাচ্চাদের থেকে দূরে, মানুষ খেলেও মরবে । সুবলের আবার বাচ্চা । বোতল খাবার আগেই ডাল, ভাত দিয়ে এলো । হারামীটা এসেছে, দেওয়া মাত্রই গপগপ করে গিলছে । আহ, সুবল নিশ্চিন্ত । জমিয়ে খেল বোতলটা, বৃষ্টি নেমেছে, কী আরামের ঘুম আজকে, আর কুত্তাটা জ্বালাবে না, কোনদিন জ্বালাবে না । 

সুবল গত এক সপ্তাহ ঘুমাতে পারছে না । রাতটা গিলে খেতে আসছে, দু'বোতল বাংলাতেও কাজ হচ্ছে না, চারদিকটা কীরকম ভয়ঙ্কর নিস্তব্ধ, কোন আওয়াজ নেই, শুধু ফ্যাকাসে ঘড়ির টিকটিক । এই নিস্তব্ধতা ওকে গিলে খাচ্ছে, সুবল বড় একা হয়ে গেল ।

You Might Also Like

0 Comments