আমি হিরন্ময়ী - শিল্পী দাস



১●

 প্রতিদিন বাইরে বেরোনো, রাত করে বাড়ী ফেরা
এ সব অার চলবে না। বাবা মা এটা ভালো চোখে দেখছে  না। প্রতিবেশীরাও কানাঘুষা করছে,নানা জনে নানা কথা বলছে। না এভাবে চলতে পারেনা হীরা।

২●

 হিরন্ময়ী খুব ভালো ছবি অাঁকে,ছোটো বেলা থেকেই শখ ছবি অাঁকা।অাস্তে অাস্তে সেটা মনের মধ্যে জায়গা করে নিলো। ছবি এঁকে সে কিছু একটা করবে সেই ইচ্ছা থেকেই হিরন্ময়ী অার্টকলেজে ভর্তি হলো। মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে, বাবা চাইতেন মেয়ে ইউনিভার্সিটিতে ইংরাজীতে অনার্স পড়ুক তারপর এম এ কমপ্লিট করে ভাল একটা চাকরী করুক।  কিন্তু হিরন্ময়ী বাবার  কথা রাখতে পারলো না।সে তার নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে পারলো না অার্টকলেজেই ভর্তি হলো।
পড়াশোনার ফাঁকেফাঁকে দুই তিন জন ছেলে মেয়ে কে টিউশন পড়াতো তাদের বাড়ী গিয়ে।

৩●

  ভালোই কাঁটছিলো দিন, তিন জনের সংসার। বাবা ছোটখাঠো একটা প্রাইভেট চাকরী করতো, অর্থ হয়তো কম ছিলো কিন্তু সুখেই ছিলো ওরা।
এখন হীরা মানে হিরন্ময়ীর ডাক নাম, তৃতীয় বর্ষে
হীর। অাঁকার হাত খুব ভালো, সেবারের অার্ট কম্পিটিশনে হীরার ছবি বেষ্ট ছবির পুরষ্কার পেলো। বাবা মা তো বেজায় খুশী।

৪●

 সুমিতা হীরার  বান্ধবী ওর বিয়েতে পরিচয় হয় অরিন্দমের সাথে হ্যান্ডসাম ছেলে মাল্টিন্যাশনাল কম্পানীতে চাকরী করে। অরিন্দমই মাঝে মাঝে ফোন করে কথা বলে। অাস্তে অাস্তে দুজন খুব কাছাকাছি চলে অাসে। এক পর্যায় দুজনের মধ্যে ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুজনে চুটিয়ে চার বছর প্রেম করে । তারপর অরিন্দম হীরাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। যদিও অরিন্দমের বাবা মার এই বিয়েতে তেমন সন্মতি ছিলোনা। তবুও ছেলের ইচ্ছা কেই গুরুত্ব দেয়।

৫●

 বিয়ের পর দু বছর বেশ কাঁটছিলো। হিরন্ময়ী এখন অার্ট নিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মাঝেমাঝেই চিত্রপ্রর্দশনী থাকে তার জন্য প্রায় রাত হয বাড়ী  ফিরতে।

৬●

 অরিন্দম, হীরা তোমাকে বুঝতে হবে অামার বাবা একজন  নামকরা ডাঃ। তাঁর যথেষ্ট সুনাম অাছে। তোমার জন্য সেটা নষ্ট হোক সেটা তুমিও নিশ্চয় চাওনা হীরা।

৭●

 অরিন্দম অামি তো তোমাকে সবসময় বলেছি এটা অামার ভাললাগার একটা জায়গা। অার্ট অামি বড় ভালবাসি এটা ছাড়া অামি বাঁচতে পারবো না। তুমি তো সব জেনেই অামাকে বিয়ে করেছো। তুমি তো সবসময় অামার পাশে ছিলে তবে এখন কেন সব ছাড়তে বলছো?

৮●

 না হীরা অাগের জীবন অার এখন অনেক অালাদা এখন সমাজে অামাদের একটা সুনাম অাছে। ঘরের বৌ সবসময় বাইরে বাইরে থাকবে। রাত করে বাড়ী ফিরবে সেটা ভালো দেখাই না। হীরা তোমাকে যে কোন একটা পথ বেছে নিতে হবে। এ ভাবে চলতে পারেনা। অনেক সহ্য করেছি অনেক বুঝিয়েছি তোমাকে। শোনো হীরা ও সব ছবি ঠবি এঁকে কিচ্ছু হবেনা। ও সব করে পেট   চলবেনা বুঝলে। বাবা মা অাত্মীয় সজন সবাই চায় তুমি মন দিয়ে ঘরসংসার করো।

৯●

 অরিন্দম প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা করো। কি বুঝবো বলি বুঝবোটা কি? ওতো বোঝাতে এসোনা, ছবি অাঁকা ছাড়বে সেটাই অামার শেষ কথা।

১০●

 হিরন্ময়ী অার কোন কথা বলেনা। তার স্বপ্নের পৃথিবী অাজ দুঃস্বপ্নে ছেয়ে যাচ্ছে। এ কাকে দেখছে সে। একি সেই অরিন্দম! যে কথা দিয়েছিলো পাশে থাকবে। সকল ঝড়ঝাপটা থেকে তাকে অাগলে রাখবে। তার স্বপ্নেরা ডানা মেলে অাকাশে উড়বে পাশে থাকবে তার স্বপ্নের পুরুষ অরিন্দম। কেন বদলে যাচ্ছো তুমি অরিন্দম?  অামি তোমাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারিনা।

১১●

 হিরন্ময়ী ভাবে কোন অবস্থাতে সে ছবি অাঁকা ছাড়বে না। এর মধ্যে সে অান্তর্জাতিক একটা পুরষ্কার পেয়েছে কিন্তু অরিন্দম কে সে কিছুই বলেনি। যেদিন ডাক অাসবে জাপান থেকে সেদিন অরিন্দম কে সারপ্রাইজ দেবে এই ভেবে কিছুই বলা হয়নি।

১২●

 কাল সকালে বেরোতে হবে সুবিনয় দা দেখা করতে বলেছে কিছু বই এর প্রচ্ছদ এর ব্যপারে।
রাতে হীরা অার অরিন্দমের মধ্যে কোন কথা হয় না।অরিন্দম কেমন যেন বদলে যাচ্ছে হিরন্ময়ীর প্রতি তার কোন উৎসাহ নেই। রাতের গভীরতা অার ভালবাসার জন্ম দেয়না। বুকের উষ্ণপরশে অার অাগলে রাখেনা হিরন্ময়ীকে। হিরন্ময়ীর খোলা চুলে অার শরীরে রাতের সুগন্ধি ঘ্রাণে মাতাল হয়না অরিন্দম। ভালবাসাও কি চলতে চলতে ক্লান্ত হয়?  নাকি একঘ্যয়েমি  সভাবে পরিনত হয়। নাকি নতুনের অাগমনে এই বদলে যাওয়া হিরন্ময়ী অাকাশ পাতাল ভাবতে থাকে। এক চোখের জল গড়িয়ে অন্যচোখের পাতা ধুয়ে যায়। এ জীবন তো হিরন্ময়ী চায়নি। সুখ চেয়েছিলো অনেক অনেক সুখ অাকাশের মতো সীমাহীন সুখ। অাজ সে অাকশে মেঘের গর্জন শুনতে পায় কালো মেঘে অাস্তে অাস্তে ঘিরে ফেলছে হিরন্ময়ীর রামধনু রঙে অাঁকা অাকাশটা।

১৩●

 হিরন্ময়ী সংসারের কাজ সেরে সবাই কে সকালের খাবার দিয়ে দিলো। শ্বশুর অার অরিন্দম অফিসে বেরিয়ে গেলো।
তারপর শাশুড়ি মাকে খাওযার জন্য বললে। এসো মা তোমার খাবার গুছিয়েছি। না তুমি খেযে নাও অামি একটু পরে খাবো।হরন্ময়ী খেয়ে ঘরে গিয়ে রেডি হয়ে বেরোবে।
এমন সময় মা বললেন কোথায় যাচ্ছো?
মা অামাকে অাজ যেতে হবে একটা কাজের অর্ডার হওয়ার কথা অাজ। না তুমি কোথাও যাবে না। তোমার যা লাগে সব অামরা দেবো।
কত টাকা অায় করো তুমি? ওই টাকায় জলও গরম হবেনা বুঝলে। ও সব অাঁকা ঠাকা ছাড়ো এ বাড়ী তে থাকতে হলে অামাদের কথা শুনতে হবে।
না মা অামাকে বেরোতেই হবে। তুমি বোঝার চেষ্টা করো। এটা অামার প্যাশন। অামি কি করে ছেড়ে দেবো। ও সব জানিনা বাপু মানসন্মান নিয়ে থাকি তোমার জন্য সেটা নষ্ট হতে দিতে পারিনা।
না মা অামি যাচ্ছি দেরী হয়ে যাচ্ছে এসে কথা বলবো।হিরন্ময়ী বেরিয়ে যায়।

 ১৪●

 রাত এগারো টা বাজে বাড়ী তে ঢুকতে হিরন্ময়ীর কেন জানিনা এক অজানা ভয় কাজ করছে অাজ।কাজের চাপ তারপর ট্রেন লেট সব মিলিয়ে অাজই দেরী হলো। বাড়ী ফিরে কলিংবেল টিপতেই  কাজের মেয়েটা গেট খুললো। বুকের ভেতরটা ভীষণ ধরপড় করছে সিঁড়ী দিয়ে উঠতেই
দাঁড়াও এতো রাতে কোনো ভদ্রঘরের বৌ বাইরে থাকে? তোমাকে বারন করা শর্তেও বেরিয়েছো?
অরিন্দম অামার একটা জরুরি কাজ ছিলো অার ট্রেনটাও লেএএট, থাক কোন অজুহাত শুনতে চাইনা। কান খুলে শুনে রাখো কাল যদি বের হও তবে অার এ বাড়ীতে ঢুকবেনা বুঝলে।না অরিন্দম তুমি এটা বলতে পারোনা। চুপ একটাও কথা বলবেনা ও সব অাঁকা ফাঁকা চলবে না।
না অরিন্দম এটা মানা অামার পক্ষে সম্ভব না।এটা অামার প্যাশন এটা ছাড়তে পারবো না।
তাহলে কাল সকালেই এ বাড়ী ছেড়ে চলে যাবে।
সময় মতো ডিভোর্স লেটার পেয়ে যাবে।না অরিন্দম এ ভা্বে বলোনা।
 কোন নাটক করবে না। না অরিন্দম অামার কথা শোনো। কোন কথা নয় অাজই বেরিয়ে যাও এ বাড়ী  থেকে।

১৫●

 অনেক চেষ্টা করেও পারিনি ওকে বোঝাতে তাই বেরিয়ে এলাম শেষে। অামি পেরেছি অামার ভালোলাগা অামার ভালবাসার জায়গাটা ধরে রাখতে। অামি পেরেছি অাজ ছবি এঁকে নিজের সন্মানের জায়গাটা তৈরি করতে।অামি হেরে যায়নি।দিল্লী এয়ারপোর্ট থেকে যখন উড়ছি নিচের সবকিছু  কতো ছোট লাগছে যাদের কে সামনে থেকে বড় লাগতো।অাজ অামি বহু উপরে ওরা অামার কাছে কতো ছোট। অামি পেরেছি উপরে উঠতে। অামি দশভুজা হতে পেরেছি কিনা জানিনা তবে লড়াই টা করেছি। মা সরস্বতীর অাশীর্বাদে অামি মা সরস্বতী। অামি দুর্গা, অামি লক্ষ্ণী অামি যে নারী, অামি হিরন্ময়ী।

You Might Also Like

0 Comments