থার্ডব্র্যাকেট - আসাদ মল্লিক



দোতলার ঘরে একলা থাকে ছেলেটা। বহুদিন হল ওর সাথে গাছেদের আর কোনো সম্পর্ক নেই। ময়লা চাদর, ছেঁড়া পাঞ্জাবি আর শুকনো বোতলের সংসারে ওর ভূমিকা ঝুলবারান্দার মতোই; বাড়ির বউ ছাড়া আর কেউ তেমন আসে না। ও হ্যাঁ, বলা হয়নি; ওর একটা বউ ছিল, সুন্দরী গোলগাল, যেন সাক্ষাত মা সরস্বতী। যদিও ছেলে-বউ কেউই ঠাকুর-দেবতা মানত না...
  বইটা পড়তে পড়তে ছেলেটা এক-একদিন খেলার মাঠ হয়ে যেত। ওর বউ সেই মাঠে বসে চড়ুইভাতি করতো ছোটবেলার বন্ধুদের নিয়ে। সেমিকোলন, কমা আর দাঁড়ি দিয়ে চচ্চড়ি রেঁধে সবাই মিলে ভূতের গল্প করতো ওরা। পেটকাটি-চাঁদিয়াল-চিল ঘুড়ির লোভে ছেলেগুলো যখন মাঠের পর মাঠ পর হয়ে যেত, মেয়েগুলো তখন বুনোপাতা-বুনোফুল তুলে এনে দোকান সাজাত তাসের দেশে...
   অনেকক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলে ওরা বুঝতো ওরা এখন বড়ো হয়ে গেছে। আর তাই ওরা মিলিত হতে যখনতখন। ওরা যে আর ছোটো বাচ্ছাটি নেই- এটা বোঝাবার জন্যে ওরা মিলিত হত বারংবার। শরীর চিনতে চিনতে হারিয়ে যেত রান্নাবাটি-কিতকিতের সময়। ফেলে আসা শেষ বিকেলের রোদ আর সকালবেলার খেজুরগুড়ের গন্ধরা হারিয়ে যেত অচিরেই...
  এখনও দোতলার ঘরে একলা থাকে ছেলেটা। রূপকথার গল্পগুলোকে বাস্তবের সাথে মিলিয়ে মিশিয়ে এদ্দিনে কোনোমতে চালিয়ে এলেও এখন আর তার গুলগল্প চলছিল না। পেটের খিদে আর শরীরের চাহিদায় জর্জরিত ছেলেটা একদিন হঠাৎ বাজার হয়ে বসল পাড়ার মোড়ে। তারপর থেকে তার খুব চাহিদা। সবাই তাকে চায়। শুধু সেই ত্যাগ করেছে নিজেকে। দোতলার ঘরে আজকাল আটপাওয়ালা মাকড়শার বাস, তারা শিকার ধরতে জানে তবে বেঁচে থাকতে জানে না...

You Might Also Like

0 Comments