অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা - রুনু পাটারী


ছেলেটি আর মেয়েটির কিছু দিনের বন্ধুত্ব।
একদিন ছেলেটি মেয়েটিকে ফোন করলো কিছুক্ষন কথা বলার পর ছেলেটি দেখা করতে চাইল তার কথায় রাজি হয়ে মেয়েটি তার পরের দিন দেখা করতে আসলো একটি রেস্টুরেন্টে ।ছেলেটি সেদিন একটি গোলাপের চারা লাগলো তার বাড়িতে।
সেদিন ছেলেটি মেয়েটিকে বললো আমি তোমায় ভালোবাসি......
মেয়েটি কথাটি শুনে অবাক হলো সে কিছু না জানিয়ে বাড়ি চলে গেল।
বাড়ি ফিরে বন্ধুদের সাথে আলোচনা করলো ছেলেটির সম্মন্ধে,
বান্ধবীরা বললো ভালোবাসে বলেছে নিশ্চই এর পিছনে কোনো কারণ আছে ।
তুই জিজ্ঞাসা করবি কাল গিয়ে কি কারণ । তাদের কথা শুনে মেয়েটি যথারীতি পরের দিন দেখা করে ছেলেটিকে জিজ্ঞাসা করলো ।
তুমি আমায় ভালোবাসো তার কারণ কি ? আমি সুন্দরী তাই ? 
ছেলেটি বললো তোমার থেকে অনেক বেশি সুন্দরী নিশ্চয়ই আছে ।
মেয়েটি বললো তাহলে কি আমার বাবার অনেক অর্থ তাই ? 
ছেলেটি বললো তোমার বাবার থেকে আরো অনেক বড়লোক এই শহরে নিশ্চয় আছে ।
মেয়েটি বললো তাহলে কি আমি শিক্ষিত, গুণবতী তাই ?
ছেলেটি বললো তোমার থেকে কি আর বেশী কেও শিক্ষিত নেই ? 
মেয়েটি বললো তাহলে কেন তুমি আমায় ভালোবাসো ? 
ছেলেটি বললো ভালোবাসি ভালোবাসি
তার তো কোনো কারণ নেই , কাউকে কি ভালোবাসতে গেলে কোনো কারণ লাগে?
কি জানি বাপু, কিন্তু আমার কাছে ভালোবাসতে গেলে তো কোনো কারণ লাগে না ।
মেয়েটি বললো আচ্ছা তুমি কি আমার কাছ থেকে কিছু চাও ? 
ছেলেটি বললো তাও নয় ভালোবেসে আমি শুধু দিতে জানি চাইতে নয় । 
আমি শুধু তোমায় ভালোবাসি আর ভালোবাসবো।
তার বদলে তোমায় কিছুই দিতে হবে না, এমনকি তোমার কাছ থেকে ভালোবাসাও চাইবো না। 
এরপর তারা বাড়ি ফিরে এলো ছেলেটির কথা গুলো মেয়েটির মস্তিষ্কে ভালোবাসার রসদ যুগিয়ে বেড়াচ্ছিল। 
সে তার বান্ধবীদের সাথে এই ব্যাপারে আলোচনা করলে, বান্ধবীরা জানায় কারণ ছাড়া ভালোবাসা সেটা আবার কেমন, ধুর এখনকার দিনে এসব হয় নাকি ।
নিশ্চয় কোনো মতলব আছে । 
পরের দিন মেয়েটি ছেলেটির সাথে আবার দেখা করলো । আজকে ছেলেটির গোলাপ গাছে একটি কুঁড়ি ধরেছে । 
তারা আজকে একটি নদীর পাড়ে গিয়ে বসেছে গল্প করতে করতে হটাৎই মেয়েটি বললো তুমি আমার কাছ থেকে কি চাও?
ছেলেটি বললো ভালোবাসার বদলে আমি তো কখনো কিছু চাইনি। 
মেয়েটি বললো যদি আমার কাছে তোমার কিছু চাওয়ার না থাকে তাহলে তো একদিন আমি হারিয়ে যাব ।
ছেলেটি বললো তোমাকে আমি কখনো পেয়েছি নাকি তাই হারানোর ভয় পাবো।
মেয়েটি সারাদিন ভাবে ছেলেটির কথা সে তার বান্ধবীদের জানিয়েছে, ছেলেটি অনেক আলাদা, সবার থেকে অনেক আলাদা । 
এইভাবে তাদের মেলামেশা বাড়তে থাকে ,আর মেয়েটি আস্তে আস্তে ছেলেটিকে ভালোবেসে ফেলে।
ছেলেটি একদিন জানায় যে সে বাঁশি বাজাতে খুব ভালোবাসে রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে যায় সে তখন বাঁশি বজায়, আর তার বাঁশির সুরে মেয়েটি নাচে।
মেয়েটি শুনে হেসেছিল বললো এটা তোমার স্বপ্ন বুঝি ?
ছেলেটি বলেছিল হুঁ, বাস্তবে যাকে ধরা যায়না স্বপ্নে তাকে অনায়াসেই ধরা যায়, বাস্তব যেখানে শেষ হয়, স্বপ্ন সেখান থেকেই শুরু হয় ,তাই আমি স্বপ্ন দেখতে খুব ভালোবাসি।
মেয়েটি বললো ঠিক আছে তোমার বাঁশি একদিন শুনবো।
পরের দিন ছেলেটির গোলাপের কুঁড়িটি ফুলে পরিণত হয়েছে দেখে সে খুব খুশি হয়েছে 
এই প্রথম ফুলটা সে তার ভালোবাসাকে দিতে চায়, তাই সাথে করে নিয়ে গেল আর নিলো তার বাঁশি।
আজকে মেয়েটি তার বাঁশি শুনলো মুগ্ধ হয়ে।
মেয়েটি বললো তুমি অনেক সুন্দর বাঁশি বাজাও।
আর জিজ্ঞাসা করলো কাল ও কি স্বপ্ন দেখেছিলে? 
ছেলেটি বললো, হ্যাঁ... আমি রোজ স্বপ্ন দেখি রোজ। ডাক্তার বলেছে স্বপ্ন দেখে দেখে আমার মাথার শিরা উপশিরা গুলো জট পাকিয়ে গেছে এখন স্বপ্ন দেখতে গেলে আমার মাথায় তীব্র যন্ত্রনা হয়। 
মেয়েটি বললো তাহলে দেখো কেন ?
ছেলেটি বললো স্বপ্নই তো আমায় বাঁচিয়ে রেখেছে।
মেয়েটি খুব অবাক হলো বাড়ি ফিরে তার বান্ধবীদের ব্যাপারটি জানালে তারা বলে পাগল একটা। 
তুই আর কাজ পেলি না শেষে একটা পাগলের প্রেমে পড়লি এর থেকে তো তোর দাদার বন্ধু ভালো ছিলো শুনলাম নাকি সে রিসার্চ করতে কানাডা যাচ্ছে এখনো সময় আছে ছেড়ে দে।
বান্ধবীদের এই কথা শুনে মেয়েটি পরের দিনই ছেলেটির কাছে গিয়ে বললো 
তোমায় স্বপ্ন দেখা ছাড়তে হবে,তোমায় ভালো হতে হবে, আর নাহলে আমায় ছাড়তে হবে।
ছেলেটি জানালো আমি স্বপ্ন দেখা ছাড়তে পারবো না । আর তোমায়, তোমায় তো আমি কখনো নিজের করে পাইনি তো কি হারাবো! 
আমি শুধু ভালোবেসে ছিলাম কোনোকিছু চাইতে নয়।
এটি শুনে মেয়েটি রাগ করে তার কাছ থেকে বিদায় নিল।
কিছুদিন পর কানাডাগামী দাদার বন্ধুর সাথে মেয়েটির বিয়ে ঠিক হলো।
আজ মেয়েটির বিয়ে ।
আর ছেলেটির আজ বাঁচার পরীক্ষা ছেলেটির যে ব্রেন ক্যান্সার ছিল মেয়েটি জানতো না। 
আজ তারই অপারেশন। 
মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেল।
দীর্ঘ এক মাস মৃত্যুর সাথে লড়াই করে আজ ছেলেটি হেরে গেল। 
মৃত্যু তার জীবন কেড়ে নিল।
আর অন্যদিকে মেয়েটি আজ হানিমুন-এ যাওয়ার জন্যে দিল্লিগামী প্লেনে চড়ে বসলো।
 যাওয়ার আগে সে তার বান্ধবীদের বলে গেল। 
স্বপ্নের থেকে বাস্তব অনেক সত্যি রে আর অনেক বেশি সুন্দর। স্বপ্নকে নিয়ে মানুষ বাঁচতে পারেনা রে তাই সমস্ত স্বপ্ন দেখা মানুষগুলো কোথায় যেন হারিয়ে যায়,
শুধু নিস্তব্ধ রাতে কারোর চিন্তায় যদি চোখ দিয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে আসে সেটা মুছতে গিয়ে মনে হয় না ,ওটা স্বপ্ন ছিল । 

তারপর শুরু হলো মেয়েটির সুখী দাম্পত্য জীবন। 

ছেলেটির সেই গোলাপ চারাটি ততদিনে জল আর ভালোবাসার অভাবে শুকনো মৃত। ছেলেটির মা চারাটি তুলে ফেলে দিলো টবে কিছু পোকা পড়ে ছিল,
সেগুলো কি পোকা?
নাকি ছেলেটির সাজানো স্বপ্ন?

আমি জানি না।

You Might Also Like

0 Comments